মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা সাব-রেজিস্টার অফিসের নবনির্মিত ভবনে দেখা দিয়েছে ফাটল। বৃষ্টি হলেই ভবনটির দুইটি কক্ষে ঝরে পানি। এতে ওই অফিসের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ নিয়ে অফিস স্টাফ, দলিল লেখক ও দাতা গ্রহীতাদের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে ভবনটির মোহরার ও রেকর্ডরুমে পানি জমে যায়। পাশাপাশি সাব-রেজিস্টারের খাস কামরা ও সহকারীর অফিস কক্ষের একাধিক স্থানে ফাটল। এহেন অবস্থায় ভবনটি ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নতুন ভবনটিতে গত ২ মার্চ থেকে কার্যক্রম শুরু হয়। পিডব্লিওডির তত্ত্বাবধানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জয়া কনস্ট্রাকশন ৩৩ শতাংশ জমিতে দু’তলা ভবন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করে। তবে ভবন বুঝিয়ে দেওয়ার ৫ মাস না যেতেই ধরা পড়ে নির্মাণ ত্রুটি। বৃষ্টি এলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।
সাব-রেজিস্টার অফিসের কর্মরতরা বলেন, এই অফিসকে ঘিরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও ১৫০ জন দলিল লেখক ও ৫০ জন নকলনবীশ রয়েছেন। ভবনের নিম্নমানের কাজ নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জয়া কনস্ট্রাকশনকে দায়ী করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। ভবনটির বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরায় অনেকটা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন বলেও অভিযোগ তাদের ।
ওই অফিসে সেবা নিতে আসা একাধিক দাতা-গ্রহীতা অভিযোগ করে বলেন, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এরকম একটা নতুন বিল্ডিংয়ে চুইয়ে পানি পড়া এবং একাধিক স্থানে ফাটলের দৃশ্য জীবনে এই প্রথম দেখলাম। এটা একটা অকল্পনীয় ঘটনা।
মানিকগঞ্জ জেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আউয়াল শরীফ খোকন বলেন, বিল্ডিংটি ব্লক ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এবং কিউরিং ঠিকমতো না হওয়ার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে বলে ধারণা করছি । এটা খুবই দুঃখজনক, আমরা এ থেকে পরিত্রাণ চাই।
পিডব্লিওডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ বলেন, আমরা যখন ৫ মাস আগে ভবনটি হ্যান্ডওভার দিলাম, তখন তো এগুলো ধরা পড়ে নাই। যেহেতু কিছু ত্রুটি বের হয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে; তিনি ওগুলো সংশোধন করে দেবেন।
ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান জয়া কনস্ট্রাকশনের সাইট ইঞ্জিনিয়ার মো. রবিন সরকার জানান , ওই ভবন নির্মাণে আমাদের যে সমস্যাগুলো আছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তা সমাধান করে দেব।
জয়া কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী মো. জুবায়ের রহমান বলেন, একটা কাজ শেষে ব্যবহারের সময় কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি হলে সেটা ঠিকাদারের দায়িত্ব ঠিক করে দেওয়া। কতৃপক্ষ আমাকে ফোন করেছিলেন; আমি ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কথা বলেছি। উনি গিয়ে যা যা সমস্যা আছে, সমাধান করে দেবেন। ফাটলের বিষয়টা সলিড ব্রিকসের কারণে হয়েছে। সলিড ব্রিকস দিয়ে যেখানেই কাজ হয়েছে, সেখানেই কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি শেষ হোক; আমাকে একটু সময় সুযোগ দিলে আমি ঠিক করে দিব।
সিংগাইর উপজেলা সাব রেজিস্টার মো. মামুন বাবর মিরোজ বলেন, বিল্ডিংয়ে পানি চুইয়ে পড়া ছাড়া দেয়ালে ফাটল ধরেছে। নিচের অংশের পাশ থেকে বালু সরে গেছে; যে কোনো সময় ধসে পড়ার আশংকা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ভবন করার সময় দায়িত্বপ্রাপ্তদের তদারকির অভাব ছিল। তারা ভবন বুঝিয়ে দিয়ে চলে যাওয়ার পর আমাদের পাত্তাই দেবোনি! নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান জয়া কনস্ট্রাকশনের ইঞ্জিনিয়ার এসেছিলেন; বিষয়টি দেখবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করে গেছেন।
এ ব্যাপারে জেলা রেজিস্ট্রার মো. জাহিদ হোসেন বলেন, আমি এই প্রথম শুনলাম। বিষয়টি কর্তৃপক্ষ বরাবর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলব।
