সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়কের ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে ১৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকার সেতু। তাছাড়া সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্ধারিত জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা বাজারের কাছে ইছামতি নদীর ওপর সেতুটি নির্মিত হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সেতু-কর্তৃপক্ষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঝিটকা বাজারের কাছে ইচ্ছামতি নদীর ওপর ১৯ কোটি ৬৭ লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৮ টাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ধ্রুব কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে সেতুটি নির্মাণের জন্য চুক্তি হয় ২০২৪ সালের ২৮ জুন। দরপত্রের শর্তানুযায়ী, এক বছরের মধ্যে সংযোগ সড়কসহ সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা ছিল। ইতিমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্মাণকাজ শুরু করে গত ডিসেম্বর মাসে সেতুর অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ করেছে। পরে সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে গেলে বাধা দেন স্থানীয় কিছু দখলদার। এতে আটকে যায় সংযোগ সড়কের কাজ। আটকে যায় সেতু উন্মুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া।

সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, সেতুটির দুই পাশে সংযোগ সড়কের জন্য কিছু মাটি ফেলা হয়েছে। স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ীর বাধার কারণে কাজ বন্ধ রেখেছেন ঠিকাদার। সেতু দিয়ে চলাচলের উপায় না থাকায় প্রতিদিন ঝিটকা বাজারে যানজট তৈরি হচ্ছে।
ঝিটকা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেন্টু মিয়া বলেন, সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় প্রতিদিন বাজারে যানজট তৈরি হচ্ছে। সরকারি জায়গা দখল করে যারা দোকানপাট নির্মাণ করেছেন, তারাই সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণে বাধা দিচ্ছেন। সরকারের উচিত, দখলমুক্ত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা। তা না হলে এত টাকার সেতু কোনো কাজেই আসবে না।
বিষয়টি নিয়ে আরও কথা হয় সেতুর পশ্চিম পাড়ের শালহাই গ্রামের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন, ঝিটকা বাজারের ব্যবসায়ী খবির উদ্দিন, শওকত আলীসহ কয়েকজনের সঙ্গে। তারা জানান, সেতুটি নির্মাণের আগেই ভূমি অফিস থেকে দখলদার ও সরকার থেকে ইজারা নেওয়া ব্যক্তিদের তালিকা করা হয়েছে। সে সময় সরকার থেকে বলা হয়, সেতু নির্মাণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংযোগ সড়ক নির্মাণের পথে যাদের স্থাপনা পড়ে, তাঁরা তা নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নেবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা সংযোগ সড়কের জন্য সরজেমিন মেপে চিহ্নিত করে দিয়েছেন। বর্তমানে নদীর পাড় ঘেঁষে সংযোগ সড়কটি নির্মাণের কাজ শুরুও হয়েছিল; কিন্তু বাজার কমিটির সভাপতি বেলায়েত হোসেনসহ যারা সরকারি জায়গা দখল করে দোকানপাট করেছেন, তারা মানববন্ধন করে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কয়েকজন দখলদার ও সরকার থেকে ইজারা নেওয়া ব্যবসায়ী বলেন, ক্ষতিপূরণ দিয়ে সংযোগ সড়ক করলে তাদের আপত্তি নেই।
বাজার কমিটির সভাপতি বেলায়েত হোসেন বলেন, সেতুটি অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। যেভাবে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে, এর সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হলে বাজারের দোকানপাটের ওপর দিয়ে চলে যাবে। বিষয়টি নিয়ে মানববন্ধন করেছেন ব্যবসায়ীরা। একাধিকবার জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে এসেছেন। তারা কথা দিয়েছিলেন, সংযোগ সড়কটি নদীর পাড় ঘেঁষে এবং কম ক্ষতি করে নির্মাণ করবেন ঠিকাদার; কিন্তু ঠিকাদার কাউকে কিছু না বলে সংযোগ সড়ক নির্মাণ শুরু করেন। এ কারণে বাধা দেন ব্যবসায়ীরা।
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার আলম বলেন, সেতুটি নির্মাণের আগেই ২০২২ সালে সংযোগ সড়কের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে দখলদার, সরকারি ইজারা ও ব্যক্তি মালিকানা জমির তালিকা করা হয়। কিন্তু সেতুটির নির্মাণকাজ গত বছর ডিসেম্বর মাসে শেষ হলেও ভূমি অধিগ্রহণ কাজের অগ্রগতি হয়নি। গত মার্চ মাসে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য সংশোধিত প্রস্তাব ডিসির কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শেষ হলে সংযোগ সড়ক করা হবে।
জেলা প্রশাসক ডক্টর মানোয়ার হোসেন মোল্লার ভাষ্য, সেতু নির্মাণের আগে সংযোগ সড়কের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবে ১ নম্বর খাস খতিয়ানের জমির কথা বলা হয়নি। কারণ, খাস খতিয়ানের জমি এভাবে নেওয়া যায় না। ঐ জমি অধিগ্রহণ করে নিতে হবে। যে কারণে দীর্ঘদিনেও জমি অধিগ্রহণের সুরাহা হয়নি। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নদীর পাড় দখল করে সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেন। নদীর পাড় দখল করে সংযোগ সড়ক করা হলে তা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হবে। এ নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ ঝিটকা বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একাধিকবার জেলা প্রশাসনের বৈঠক হয়েছে। পরবর্তী সময়ে চলতি বছরের মার্চ মাসে সংশোধন করে সংযোগ সড়কের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাওয়া গেছে, যা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।