বর্তমান বর্তমান যুগে আমাদের হাতের মুঠোয় হাজারো তথ্য, বিনোদন ও প্রযুক্তি। এজন্য অনেকে মনে করতে পারেন যে, বই পড়ার বিশেষ প্রয়োজন নেই! তবে যারা নিয়মিত বই পড়েন, তাদের জীবনে বইয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। তাদের কাছে বই শুধু তথ্যের উৎসই নয়, বরং এটি আমাদের চিন্তাচেতনা, মননশীলতা ও অনুভূতির গভীরতা বাড়ানোর এক অনন্য উপায়।
বই পড়ার মাধ্যমে আমরা যেসব জ্ঞান অর্জন করি, তা অন্য কোনো মাধ্যম থেকে পাওয়া সম্ভব নয়; যেমন- প্রযুক্তি অতি দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে, কিন্তু বই আমাদের চিন্তার গভীরতা এবং বিশ্লেষণী ক্ষমতা বিকাশে সাহায্য করে। বইয়ের পাতায় আমরা যে জ্ঞান ও জীবনবোধ পাই, তা আমাদের আত্মবিশ্বাস ও মনোযোগ বৃদ্ধি করতে পালন করে সহায়ক ভূমিকা।
‘বই পড়া’ আমাদের মেধাকে প্রসারিত করতে সাহায্য করে। একজন সাহিত্যিক বা চিন্তাবিদ যেসব চিন্তাভাবনা, অভিজ্ঞতা ও দর্শন তুলে ধরেন, তা আমাদের জীবনে সত্যিকার অর্থেই প্রভাব ফেলে। বই আমাদের কল্পনাশক্তি ও আবেগের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে শেখায়, যা আমাদের মানসিক বিকাশের জন্যও অপরিহার্য এবং এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। নিয়মিত বই পড়ার ফলে একজন পাঠক কেবল মেধাবীই হয়ে ওঠেন না, বরং এতে করে তার মনও সুস্থ থাকে।
কেননা, বই আমাদের মধ্যে সহানুভূতি ও মানবিক গুণাবলি তৈরি করে। বই পড়ার মধ্য দিয়ে আমাদের নির্জনতা আলোকিত হয়। প্রকৃতির মধ্যে এক কাপ চায়ের সঙ্গে একটি বই হাতে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা চলে যাই এক অন্য পৃথিবীতে, যেখানে আছে জীবন ও কল্পনার অফুরন্ত সম্ভাবনা। বই পড়া মানে কেবল জানার চেষ্টা নয়, অন্তর থেকে কিছু শেখার চেষ্টাও। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ বা স্কুলে পাঠ্যবইয়ের বাইরে আরো অনেক ধরনের বই আমাদের মেধার বিকাশ ঘটায়; যেমন-গল্পের বই, উপন্যাস, কবিতা এবং বিভিন্ন সাহিত্যিকের বই। এসব বই পড়ে আমরা বুঝতে পারি অন্যদের দৃষ্টিভঙ্গি, তাদের অভিজ্ঞতা এবং চিন্তাচেতনা। ফলে আমরা নিজেকে আরো উন্নত, সহিষ্ণু ও সৃজনশীল হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।

এদিকে আমরা অ্যারিস্টটল, প্লেটো, সক্রেটিস, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং বড় বড় সাহিত্যিক ও দার্শনিকের সরাসরি স্টুডেন্ট না হয়েও কিন্তু আমরা তাদের লেখা বইগুলো পড়ে জ্ঞান আহরণ করতে পারি। আজকাল সোশ্যাল মিডিয়া এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে নানা ধরনের তথ্য এবং বিনোদন পাওয়ার সুযোগ থাকলেও, বই পড়ার তুলনায় সেগুলো কখনোই সম্পূর্ণ বিকল্প হতে পারে না। বই আমাদের শেখায়, কীভাবে আমাদের মানসিকতা বদলাতে হয় এবং কীভাবে গভীর চিন্তা করে জীবনকে আরো সুন্দর-সাবলীল করে তোলা যায়। বই পড়া শুধু এক ধরনের সময় কাটানো নয়, বরং এটি একটি শখ, একধরনের জীবনের দর্শন। একমাত্র বই পড়ার মাধ্যমেই আমরা নিজেদের জীবনকে সমৃদ্ধ, গভীর ও বহুমুখী করে তুলতে পারি; অর্থাৎ, বই পড়ার বিকল্প কিছুই নেই।
গতকাল (১ ফেব্রুয়ারি) থেকে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা শুরু হয়েছে। প্রত্যাশা করি, দেশ-বিদেশের অগণিত লেখক-প্রকাশক ও পাঠকের মিলনমেলা হয়ে উঠবে মহান ফেব্রুয়ারির এবারের বইমেলা।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ