কিছুদিন আগেও মনে হচ্ছিল হয়তো করোনা মহামারি পুরোপুরি বিদায় নিয়েছে। জনজীবন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে। স্কুল-কলেজ-অফিস আবার সরব। সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান পালনেও নেই আগের মতো ভয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আবারও বাড়তে শুরু করেছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। বিশেষ করে বেশ কিছু দেশে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে মানুষের মধ্যে। আমাদের দেশেও কিছু কিছু এলাকায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সর্বাগ্রে প্রয়োজন জনসচেতনতা এবং সর্বোচ্চ সতর্কতা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার এই নতুন ঢেউ শুরু হয়েছে একটি নতুন রূপ নিয়ে। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে—পুরোনো উপসর্গগুলোর পাশাপাশি নতুন কিছু উপসর্গও দেখা দিচ্ছে, যা সাধারণ সর্দি-জ্বরের মতো মনে হলেও এটা রোগীকে মারাত্মক পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার এই ধরণটি তুলনামূলকভাবে দ্রুত সংক্রমণ ঘটাতে পারে, যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে লক্ষণ তুলনামূলকভাবে মৃদু; কিন্তু দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি, বয়স্ক এবং শিশুদের জন্য এটি আবারও প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।
২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত করোনা ভাইরাস বিশ্ববাসীকে যেভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল, তাতে আমরা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছি যে, একমাত্র সতর্কতা অবলম্বন করে চললেই কোভিড মহামারির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এখন পর্যন্ত এটাই একমাত্র কার্যকর চিকিত্সা বা উপায়। শুধু হাসপাতাল বা চিকিত্সাব্যবস্থার ওপর ভরসা করলে চলবে না, বরং এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাই ব্যক্তিপর্যায়ে সচেতন হওয়া। মাস্ক ব্যবহার, হাত ধোয়া, ভিড় এড়িয়ে চলা এবং অসুস্থ হলে ঘরে থাকা—এসব বিষয় আমরা আগেও মানতাম, এখন আবারও এগুলো অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। এছাড়া স্বাস্থ্য খাতকে প্রস্তুত রাখতে হবে আগের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে। হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ, পর্যাপ্ত আইসিইউ ও সাধারণ বেড প্রস্তুত রাখা, চিকিত্সক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। সেইসঙ্গে প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুত রাখা এবং প্রয়োজনে আবারও টেস্টের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। সরকার এসব বিষয়ে ইতিমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করতে শুরু করেছে বলে গণমাধ্যমের খবরে জানা যাচ্ছে, যা আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক।
করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, বিশ্বের অনেক অঞ্চলে কোভিডের টিকা গ্রহণ কমে গেছে। মানুষ এখন আর আগের মতো স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলতে চাইছে না। ফলে এই সুযোগে নতুন করে সংক্রমণ বাড়াতে শুরু করেছে এই প্রাণঘাতী ভাইরাস।
টিকার বুস্টার ডোজ নেওয়া থেকে অনেকেই বিরত থাকছেন। অথচ এটি নেওয়া মানেই প্রতিরোধ শক্তি বাড়ানো। তাই নতুন করে টিকাদান কর্মসূচি সচল করা এবং মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা জরুরি। জনসচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ সব মহলকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে। প্রশাসনের দায়িত্ব যেমন নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, তেমনি নাগরিকের দায়িত্ব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—আতঙ্ক নয়, প্রয়োজন সচেতনতা। ভুল তথ্য বা গুজব ছড়িয়ে মানুষকে ভয় দেখানো যাবে না, বরং নির্ভরযোগ্য উত্স থেকে তথ্য নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। সবাই সতর্ক থাকুন, নিরাপদ থাকুন।
লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়