সম্প্রতি লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি নেতা তারেক রহমানের সাক্ষাতের পর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে। অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন ঘিরে স্বভাবতই তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশার শেষ নেই! একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে নিজেদের সেই আশা, আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন শিক্ষার্থী। তরুণ প্রজন্মের সে ভাবনা মূলধারার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো—
একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই
তাহসিন সারা
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন তরুণ প্রজন্মের কাছে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। তরুণরাই দেশের ভোটারদের বড় একটি অংশ। আমাদের ভাবনা, আশা ও আকাঙ্ক্ষা দেশের ভবিষ্যত্ গঠনে মুখ্য ভূমিকা রাখবে। আর তাই অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে আমাদের মতামতের প্রতিফলন ঘটার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।

আমরা তরুণ সমাজ একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। চাই এমন একটি রাজনৈতিক পরিবেশ, যেখানে ভয়ভীতি, সহিংসতা বা অনিয়ম থাকবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনি ইশতেহারে সুশাসন, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, কর্মসংস্থান, মানসম্মত শিক্ষা ও ডিজিটাল উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেখতে চাই ।
আশা, আগামীর সরকার জনগণের সঙ্গে জবাবদিহিতামূলক আচরণ করবে। আমাদের মতামত ও চাহিদাকে গুরুত্ব সহকারে আমলে নেবে। আমরা স্বপ্ন দেখি, বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্র হয়ে উঠবে, যেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, থাকবে সমানাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার। রাজনীতিতে কেবল ভোটার হিসেবে নয়, অংশ নিতে চাই নেতৃত্বদানেও।
সব মিলিয়ে, আমাদের প্রজন্ম আগামী নির্বাচনে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন প্রত্যাশা করে। তবে তা অবশ্যই হতে হবে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে। মনে রাখতে হবে, যে কোনো দেশের অগ্রগতির পথে তরুণরা এক গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। সুতরাং, দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে তরুণ প্রজন্মের ভাবনাগুলোকে সম্মান জানিয়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
লেখক : শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
আগামীর নির্বাচন নিয়ে স্বপ্নটা অনেক বড়
কাজী গালিব
বাংলাদেশের গণতন্ত্র আজ আর কেবল একটি একক ব্যবস্থার নাম নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে আমাদের আশা, আকাঙ্ক্ষা আর স্বপ্নের বাহক। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচন ঘিরে দেশের মানুষ যেমন সচেতন, তেমনি হূদয়ের গভীরে লালন করছে কিছু মৌলিক প্রত্যাশা।
আমরা আশা করি, নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ, যেখানে প্রতিটি ভোট হবে মূল্যবান এবং প্রতিটি ভোটার হবেন সম্মানিত। যেন কেউ ভয় বা প্রভাবের ছোঁয়ায় নয়, বরং ভোট দিতে পারেন নিজের বিবেক অনুযায়ী। আমাদের আকাঙ্ক্ষা, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এমন একটি নেতৃত্ব গড়ে উঠুক, যারা ক্ষমতার নয়, বুঝে দায়িত্বের গুরুত্ব। যারা মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করবেন, মতের ভিন্নতা সহ্য করবেন, গণতন্ত্রের চর্চায় বিশ্বাস রাখবেন এবং দেশের সম্পদকে রক্ষা করবেন সততার সঙ্গে।

স্বপ্নটা অনেক বড়! আমরা চাই, এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে ভোট হবে গণতন্ত্রের উত্সব, দলমতের ঊর্ধ্বে গিয়ে গড়ে উঠবে সম্মিলিত জাতিসত্তা। যেখানে একজন কৃষকের ভোটকে যেমন মূল্যবান হিসেবে বিবেচিত হবে, তেমনিভাবে একজন শিক্ষকের স্বপ্নও রাষ্ট্রের অগ্রগতির অংশ হয়ে উঠবে। আমরা স্বপ্ন দেখি, একটি পরিপক্ব গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির, যেখানে তরুণেরা নেতৃত্বে আসবেন মেধা, নৈতিকতা ও দেশপ্রেম নিয়ে। যেখানে মানুষ দল নয়, মূল্যবোধ দেখে রায় দেবে।
নির্বাচন ‘এক দিনের ঘটনা’ নয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা, নৈতিকতা এবং নাগরিক চেতনার আয়না। তাই আমরা চাই, নির্বাচন শুধু নিয়ম রক্ষার আয়োজন না হয়ে উঠুক। নির্বাচন হোক গণতন্ত্রের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতির বাস্তব প্রমাণ।
লেখক : শিক্ষার্থী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
নির্বাচন হোক দেশের জন্য মাইলফলক
মোসা. নাকিবা আনোয়ারী রিয়া
সুষ্ঠু গণতন্ত্র একটি জাতির মেরুদণ্ড। যার ওপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে একটি সমাজ, একটি রাষ্ট্র এবং একটি জাতির বিশ্বাস। নির্বাচনের মূল ভিত্তি হচ্ছে পূর্ণ গণতন্ত্র। গণতন্ত্র শুধু চার/পাঁচটি অক্ষরে সীমাবদ্ধ একটি উচ্চারণ নয়, বরং এর প্রতিটি শব্দই এক একটি বিরাট অর্থ বহন করে।
আসছে নির্বাচন নিয়ে যদি প্রত্যাশার কথা বলতে হয়, নির্বাচন হতে হবে অবাধ সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ। যেখানে থাকবে সকল দলের অংশগ্রহণ। প্রশাসন হবে স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ। জনগণ উৎসবমুখর পরিবেশে স্বাধীনভাবে নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারবে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য হয়ে উঠুক মাইলফলক। যেখানে রায় দেবে তারুণ্য। যে রাজনৈতিক দল দেশের কথা ভাববে, তরুণদের ভোট যাবে তাদের ঝুলিতে। আমরা আশা করি, আগামীর নির্বাচন হবে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন, যে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রাণ ফিরে পাবে। বেকারত্ব দূরীকরণ ও শিক্ষা খাতকে ঢেলে সাজানোই যেন হয় আগামীর নির্বাচিত সরকারের মূল প্রতিশ্রুতি।
লেখক : শিক্ষার্থী, রসায়ন বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
জনগণ যেন নির্ভয়ে-সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে
ফখরুল ইসলাম ফাহাদ
বর্তমানে বাংলাদেশে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব পালন করছে। সামনের বছর, তথা ’২৬ সালের প্রধমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের কথা শোনা যাচ্ছে। ফলে বর্তমান সময়টি শুধু সরকার পরিবর্তনের নয়, বরং গণতন্ত্র, জনআস্থা ও দেশের ভবিষ্যত্ নির্ধারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।

সরকার বলছে, তারা একটি অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করতে চায়; কিন্তু প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে এখনো প্রশ্ন রয়েই গেছে! বিরোধী দলগুলোর অবস্থানও এখনো স্পষ্ট নয়—অনেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় আছেন। সাধারণ মানুষ বা ভোটারদের মধ্যেও রয়েছে আগ্রহের ঘাটতি। ভোট দিতে না পারা, সহিংসতা ও আগেভাগেই নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারিত হয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা তাদের আস্থায় যতটা চিড় ধরিয়েছে, সেখান থেকে তাদের বের করে আনতে হবে।
মানুষ এখন আর উন্নয়নের বুলি চায় না, বরং চায় বাস্তব পরিবর্তন, তথা খাদ্য, বস্ত্র, চিকিত্সা, শিক্ষা ও কর্মের নিশ্চয়তা। বিজ্ঞজনেরা বলে থাকেন, তরুণ প্রজন্মের রাজনীতিতে আগ্রহ হারানোর কারণ হলো—তারা প্রতিশ্রুতি শুনেছে বহুবার, কিন্তু দেখেনি কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন। তাই এই মুহূর্তে প্রয়োজন একটি সহিংসতামুক্ত, নিরপেক্ষ নির্বাচন। আর তার জন্য দরকার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত প্রশাসন, সব দলের জন্য সমান সুযোগ, শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন এবং নিরপেক্ষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আমরা এমন একটি নির্বাচন চাই, যেখানে জনগণ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে এবং সবাই দেশের স্বার্থকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দেবে। এখনই সময় সেই নতুন সম্ভাবনার পথ ধরে এগিয়ে যাওয়ার।