পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপারে আমরা মাঝেমধ্যে বিরূপ মন্তব্য করি। তাদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হই। অনেক সময় কারণে-অকারণে তাদের অপমান-অপদস্থ করি, অকথ্য ভাষায় গালাগালি করি। এমনকি তাদের ওপর চড়াও হই বা আক্রমণ করি। কিন্তু ব্যক্তিগত-পারিবারিক, সামাজিক এমনকি রাজনৈতিকভাবে বিপদে-আপদে পড়লে সবার আগে ঠিকই তাদের শরণাপন্ন হই। তাদের অবস্থা হয়েছে বাংলা সেই প্রবাদবাক্যের মতো— ‘কাজের সময় কাজী, কাজ ফুরালেই পাজি’। তাদের সাথে অনেক সময় এমন আচরণ করা হয় যাতে প্রশ্ন উঠতে পারে যে, সংকটে পড়লে পুলিশ অ্যাকশনে যাবে কেন? তারা তো ভাবতে পারে, তারা এখন অতি উৎসাহী হয়ে কোনো কাজ করলে তাদের বিরুদ্ধেও একসময় মামলা হতে পারে, তাদের জেলে যেতে হতে পারে। যেমনটা আগের সরকারের আমলে অতি উৎসাহী ভূমিকার জন্য এখন অনেকে বিপাকে পড়েছেন। সুতরাং, তারা ঝুঁকি নিতে যাবে কেন?
আমাদের বক্তব্য হলো, কথায় কথায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা অনুচিত। তারা জনগণের বন্ধু। যদিও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে ঢালাওভাবে একটি বাহিনীকে অপমান-অপদস্থ করতে পারি না আমরা। এতে দিনশেষে আমাদেরই ক্ষতি। অবশ্য পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ম-কানুনের মধ্যে থাকতে হবে এবং সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে হবে। তারা যেমন দায়িত্বশীল আচরণ করবেন, তেমনি আমাদেরও পূর্বাপর চিন্তা করে তবেই তাদের ব্যাপারে মন্তব্য করতে হবে। তাদের কথায় কথায় ‘আগের সরকারের দালাল’ ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করা অবাঞ্ছনীয়। একটি অতীব জরুরি বাহিনী হিসেবে তাদের ব্যাপারে দলমত নির্বিশেষে ও সামগ্রিকভাবে আমাদের সুধারণা পোষণ করা উচিত।
অনেক সময় দেখা যায়, যতজন মানুষ কোনো কর্মসূচি পালন করেন, তাদের রক্ষায় পুলিশের সংখ্যাই থাকে বেশি। সংঘাত-সংঘর্ষে জীবন রক্ষায় আমরা তাদের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আশ্রয় নিই। তাই কথায় কথায় আমরা যেন তাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার না করি। আন্ডারমাইন না করি। বরং সম্ভব হলে তাদের সহযোগিতা করি। বিশেষ করে, তাদের জন্য উপযুক্ত ট্রেনিং, অত্যাধুনিক অস্ত্র-শস্ত্র, পর্যাপ্ত যানবাহন ও আবাসনের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির প্রতি আমাদের সুদৃষ্টি দিতে হবে। ২০২৪ সালের গণঅভূত্থানের পর তারা নানাভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছেন। তারা যাতে এখন সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে পুর্ণোদ্যমে এবং আগের মতো মনোবল নিয়ে কাজ করতে পারেন, সেই ব্যাপারে আমাদের সর্বাধিক উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন।
অবশ্য অতীতের মতো তাদের ব্যক্তিগত বা দলীয়ভাবে লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত করা যাবে না। কেননা, এর পরিণাম কখনো শুভ হয় না। যারা ক্ষমতায় থাকাকালে তাদের নগ্নভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করেন, ক্ষমতায় না থাকলে তাদের এতো শক্তিমত্ত্বা যায় কোথায়? অর্থাৎ, কী সরকারি বা বিরোধী দল— সংকট বা বিপদে পড়লে আমরা সবাই পুলিশের সাহায্য প্রত্যাশা করি। তাই তাদের অপরিহার্যতার কথা মাথায় রেখে তাদের ব্যাপারে যে কোনো মন্তব্য করার ক্ষেত্রে আরো বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা একান্ত আবশ্যক।