সারাদেশের বিআরটিএ কার্যালয়ের কর্মকান্ড সহজ করার পরিবর্তে জটিল হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অধিকাংশ জেলায় বিআরটিএর নিজস্ব ভবন নেই। রেকর্ডরুম না থাকলেও রেকর্ড কিপিং নাম্বার দিতে হচ্ছে। একই অনুমতির ক্ষেত্রে একই কর্মকর্তার একাধিকবার অ্যাপ্রুভাল দিতে হচ্ছে। নতুন কাজে কিছুটা গতি এলেও পুরাতন সব কাজে দীর্ঘসূত্রিতা বাড়ছে। এ ধরনের নানা অভিযোগ করেছেন বিআরটিএ অফিসে সেবা নিতে আসা ভুক্তভোগী বেশ কিছু মানুষ। কিছু জেলায় খোঁজ নিয়েও এসব তথ্যের সত্যতা মিলেছে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, ভেন্ডর পরিবর্তন, করোনাকালীন অচলাবস্থাসহ নানা কারনে কয়েক বছর পরে তাদের কার্ড ঢাকায় গেলেও রেডি ফর প্রিন্ট দেখায়। অনেক ক্ষেত্রে দুবছর পর দেখা যাচ্ছে ছবির সমস্যা। স্থানীয় জেলা অফিস থেকে স্লিপ নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকার বনানী সদর কার্যালয়ে গিয়ে স্লিপের ওপর লিখিত অনুমোদন নিয়ে আবারও নিজ জেলায় এসে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে হচ্ছে। যে কাজ নিজ জেলা থেকে অনুমোদন দেয়া সম্ভব। এতে ভুক্তভোগিরা ঢাকায় যাওয়ার ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে।
চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় একটি পত্রিকার সাংবাদিক মো. ইমরান, তারও ড্রাইভিং লাইসেন্সের ছবি সমস্যার কারণে প্রিন্ট জটিলতা ছিলো। সেও ঢাকায় গিয়ে কার্ড নিয়ে আসে। তিনি বলেন, বিআরটিএ অফিসের কর্মকর্তারা যথা নিয়মে কাজ করেন না ও ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানে কর্মের তদারকী করে না। আবার সরকারি বিভিন্ন দফতর চুনোপুটি দালাল ধরতে লোক দেখানো ফটোসেশন করে। এসব দালাল নিধন স্থানীয় প্রশাসনই যথেষ্ট। কিন্তু কর্মে ফাঁকি দেয়া আর জটিলতা সৃষ্টিকারীদের ধরতে হবে। তাহলে বিআরটিএ দূর্ণীতিমুক্ত ও সঠিক সমাধান হবে।
ভুক্তভোগিরা অভিযোগ করেন, পিএসভি ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নের সময় পিএসভি থাকছে না। হেভি হয়ে প্রিন্ট হচ্ছে। এগুলো হয়রানী ছাড়া কিছুই না।
কুষ্টিয়া ভেড়ামারার চালক আব্দুল গণি ও মেহেরপুরের দরবেশপুর গ্রামের চালক সোহেল রানা জানান, তাদের পিএসভি লাইসেন্স নবায়ন করতে গিয়ে অনলাইনে শুধু ভারী লাইসেন্স অপশন আসছে। পিএসভির কোন অপশন নেই। এ ধরনের সমস্যা আরো অনেকের আছে।
এ বিষয়ে ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, শুধুমাত্র চুয়াডাঙ্গা অফিসেই ৭০০/৮০০ লাইসেন্সের আবেদন আছে, যাদের ছবির সমস্যা ও রেডি ফর প্রিন্ট লেখা দেখাচ্ছে।যেসব কাজে রেডি ফর প্রিন্ট দেখাচ্ছে, প্রায় দেড়/দুবছর পেরিয়ে গেলেও সেসব পুরাতন স্মার্ট কার্ড প্রিন্ট হচ্ছে না। যেখানে নতুন ইস্যুকৃত কার্ড এক মাসের মধ্যেই দেয়া হচ্ছে। বর্তমান সময়ের লাইসেন্স ভেন্ডর পরিবর্তন হয়ে গেলে পুরাতন আবেদনকারীরা আদৌ তাদের কার্ড পাবেন কিনা তার নিশ্চয়তা নেই। সারাদেশের লাখ লাখ পুরাতন আবেদনকারীর কার্ডের দায়ভার কে নেবে? এসব ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানগুলোই বিআরটিএর দূর্নাম করছে। যদি কার্ডের সংকট থাকে তাহলে তাদের অনলাইন স্িপকার্ড দিয়েও সাময়িক সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন হলে অনেক ক্ষেত্রে এসব আবেদনকারীর তথ্য পাওয়া যাবে না বা হয়রানি শিকার হতে হবে।
অভিযোগকারীরা বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের বোর্ডে একজন অতিরিক্ত সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে স্থানীয় টেকনিক্যাল বিদ্যালয়ের একজন প্রশিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। হাস্যকর বিষয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতি মাসের পরীক্ষার বোর্ডে তাদের নিজ প্রতিষ্ঠানের ৫০-১০০ শিক্ষার্থী থাকে। সেক্ষেত্রে অনিয়ম হওয়াটাই স্বাভাবিক। যারা বিআরটিএ থেকে অনুমতিপ্রাপ্ত প্রশিক্ষক তারা এ কাজে দায়িত্ব পেলে অনিয়ম কমে যাবে। অনেক বিআরটিএ অফিসে দালালদের মাধ্যমে মাঠ সাজানো, যন্ত্র নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব থাকে। সেসব ক্ষেত্রে প্রশিক্ষকদের দায়িত্ব দিলে অনিয়ম কমে আসবে। তারা বলেন, এসব নিয়ম করা হয়েছে বিগত সরকারের আমলে। এ অবস্থায় প্রশিক্ষকদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। তাহলে বিগত সরকারের আমলের বৈষম্য থেকেই যাচ্ছে! জেলা ভিত্তিক নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান করা যেতে পারে।
প্রশিক্ষকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও সরকারিভাবে অনুমোদিত ড্রাইভিং ট্রেনিং স্কুলগুলোর নবায়নের জটিলতা রয়েছে। লোকবল কম থাকলে যারা বিআটিএর অনুমোদিত প্রশিক্ষক এসব প্রশিক্ষকদের দিয়ে ড্রাইভিং পরীক্ষার কাজ চালানো সম্ভব।
অনেক ভুক্তভোগি অভিযোগ করেন, মাঝে মাঝে হঠাৎ করেই যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে রাজস্ব ফিসের টাকার পরিমাণ বেড়ে যায়। এ ধরনের সমস্যা এক সপ্তাহ থাকলে কোটি কোটি টাকার বাড়তি রাজস্ব জনগনের পকেট থেকে বেরিয়ে যায়।