রাজধানীর ‘কিচেন গার্ডেন’ খ্যাত মানিকগঞ্জের সিংগাইরে বৃষ্টিতে প্রায় ২৮ হেক্টর জমির পেঁপে নষ্ট হয়ে গেছে । এতে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন চাষীরা। আকস্মিক অতিবৃষ্টিতে চাষীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। এছাড়া অনেক এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে সরকারি খাল ভরাটের করণে তিন ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলেও অনেকে অভিযোগ করেছেন ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সিংগাইরে এ বছর ৮৫০ হেক্টর জমিতে পেঁপে আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের ৭৬০ হেক্টরের চেয়ে ৯০ হেক্টর বেশি। চলতি মৌসুমে প্রায় ৫০ কোটি টাকার পেঁপে বিক্রি হবে বলে আশা করেছিল কৃষি অফিস। কিন্তু বৃষ্টিতে সব এলোমেলো করে দিয়েছে।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, টানা কয়েকদিনের বৃষ্টির পানি এখনো অনেকের জমিতে জমে আছে। এছাড়া কারো কারো জমি থেকে পানি নেমে গেলেও ফলন্ত পেঁপে গাছের গোড়া পঁচে গাছগুলো মরে যাচ্ছে। এতো পেঁপে চাষে টাকা খরচ করে এখন হতাশায় ভুগছেন চাষীরা।
জানা যায়, সিংগাইরে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পেঁপে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়। এছাড়াও সিংগাইরে পেঁপে বিক্রির জন্য গড়ে ওঠা বেশ কয়েকটি পাইকারি আড়তেও প্রচুর পরিমাণে পেঁপে ক্রয় বিক্রয় হয়। এ বছর পেঁপে চাষীরা ২-৩ বার পেঁপে বিক্রি করেছিল। এতে অনেকের খরচ ওঠেনি। ফলে কৃষকরা তাদের লাভতো দূরের কথা আবাদে বিনিয়োগ করা পুঁজি ফেরত পাওয়াই এখন কাঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরদিকে প্রতি বছর সিংগাইর থেকে যে কোটি কোটি টাকার পেঁপে বিক্রি হয় তা গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখে। এ বছর পেঁপে চাষীদের এই ক্ষতি শুধু কৃষকদের নয় স্থানীয় অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই প্রতিবেদকের কথা হয় উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের পেঁপে চাষী মনছুর আলী, আনছার, ছাত্তার প্রামাণিক, হোসেন বেপারী ও খোকনের সঙ্গে। তার বলেন, আমাদের অনেকেই ৪-১০ বিঘা পর্যন্ত জমিতে পেঁপে চাষ করেছে। প্রতিটি গাছে ভালো ফলন ছিল। বৃষ্টির পানিতে গাছের গোড়া পঁচে একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। তারা আরো বলেন – ঋণ করে পেঁপে চাষ করেছিলাম আমরা। এখন সেই ঋণ শোধ করাই কঠিন হয়ে গেলো। এছাড়া তারা তাদের এই ক্ষতির জন্য অপরিকল্পিতভাবে সরকারি খাল ভরাট করার কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতাকেও দায়ী করছেন। তিন ফসলি চাষী জমি রক্ষায় জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রশাসনের সহযোগিতা চান এই পেঁপে চাষীরা।
জয়মন্টপ ইউনিয়নের দেওলী গ্রামের পেঁপে চাষী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, প্রবাস থেকে এসে আমি জীবিকার তাগিদে কৃষির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। এবছর আমি ৪ বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করেছিলাম। মাত্র তিনবার বিক্রি করেছি। এখনো খরচ ওঠেনি। বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমে হঠাৎ সব নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। সরকারি সহায়তা পেলে আবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতাম।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুল বাশার চৌধুরী বলেন, সিংগাইরে পেঁপে একটি লাভজনক ফসল। তবে টানা বৃষ্টির কারণে হঠাৎ করে পানি জমে যাওয়ায় গাছের শিকড় পচে মারা যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ২৮ হেক্টর জমির পেঁপে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে যা টাকার অংকে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ কোটি টাকা। পেঁপে চাষীদের ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।