পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলিম উম্মাহর অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। হিজরি জিলহজ মাসের দশম দিনে এই উৎসব উদযাপিত হয়। এই হিসেবে আগামীকাল (শনিবার) বিশ্বব্যাপী পবিত্র ঈদুল আজহা উৎসব উদযাপিত হবে। দিনটিতে বিশ্বের আপামর মুসলিম সমাজ মেতে উঠবে বাঁধভাঙা উল্লাসে।
‘ঈদ’ শব্দের অর্থ আনন্দ এবং ‘আজহা’ শব্দের অর্থ কোরবানি বা উৎসর্গ। অর্থাৎ, ঈদুল আজহা হলো ত্যাগের আনন্দ। এই দিনে সামর্থ্যবান মুসলমানেরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হালাল পশু কোরবানি করে থাকেন। মূলত আল্লাহর প্রতি অগাধ ভালোবাসা, আনুগত্য ও ত্যাগের মহিমাকে স্মরণ করতেই এই উৎসবের প্রবর্তন। মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর নির্দেশে স্বীয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। আল্লাহর প্রতি তার এই আত্মত্যাগ ও আনুগত্যের দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখতেই ঈদুল আজহার প্রচলন হয়। আল্লাহ-তায়ালা ইব্রাহিম (আ.)-এর এই অবিচল আনুগত্যে সন্তুষ্ট হয়ে ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানির ব্যবস্থা করেন। সেই থেকেই পশু কোরবানির রীতিনীতি চলে আসছে।
পবিত্র কুরআনে সুরা কাউসারের ২ নম্বর আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘সুতরাং তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশে সালাত আদায় করো এবং কোরবানি করো।’ তবে কোরবানির মর্মকথা কেবল পশু জবাই করা নয়, বরং এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য হলো মনের পশুত্বকে বিসর্জন দেওয়া। আমাদের ভেতরের লোভ, হিংসা, অহংকার, পরনিন্দা, গিবত ইত্যাদি পাশবিক প্রবৃত্তিগুলোকে কোরবানির মাধ্যমে পরিশুদ্ধ করাই প্রকৃত কোরবানি। পশু কোরবানি তার প্রতীকী ব্যাপার মাত্র। এর মাধ্যমে আল্লাহ-তায়ালা আমাদের অন্তর পরীক্ষা করে থাকেন। সেই কথা তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন এই মহান বাণীতে : ‘তাদের (জবাই করা পশুর) গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং তার নিকট পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া বা খোদাভীতি (সুরা: হজ, আয়াত: ৩৭)।’
ঈদুল আজহার দিন প্রথমেই আমরা ঈদের সালাত আদায় করব। এর পর সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি করব। কোরবানির গোশত যথারীতি বিলিবণ্টন করব, যাতে আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী এবং দরিদ্র ও অসহায় মানুষ বঞ্চিত না হয়। বলা বাহুল্য, এর মাধ্যমে সামাজিক সাম্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠিত হয়। আমাদের উচিত, ঈদুল আজহার ত্যাগের মহিমাকে বুকে ধারণ করে আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে আরো সুন্দর ও অর্থবহ করে গড়ে তোলা। কেননা অন্যের প্রতি সহানুভূতি, সহমর্মিতা এবং আত্মত্যাগের মানসিকতা ছাড়া একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে উঠতে পারে না; কিন্তু আমরা আমাদের অহংকার, লোভলালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ক্রোধ ইত্যাদিকে কোরবানি দিতে কতটা প্রস্তুত?
আমরা মনে করি, ঈদুল আজহার ত্যাগের আনন্দ থেকে দীক্ষা নিলে সমাজের কেউ নিরানন্দ থাকবে না। এজন্য সবাইকে ভেদাভেদ, হানাহানি ও হিংসা-প্রতিহিংসা ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমরা যদি একত্রে কাজ করতে না পারি, তাহলে ঈদ সকলের জন্য আনন্দময় হয়ে উঠবে কীভাবে? আর তাই আমাদের এমন এক মৈত্রির সমাজ গঠন করতে হবে, যেখানে নাগরিক হিসেবে কেউকে অবহেলা ও অনাদর করা যাবে না। বিশেষ করে ঈদের আনন্দ সবার নিকট পৌঁছিয়ে দিতে হলে সমাজের গরিব-দুঃখী, অভাবী, বিপদগ্রস্ত, ছিন্নমূল মানুষের প্রতি আমাদের সামাজিক দায়দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করতে হবে।